রাজধানীর উত্তরায় কিশোর গ্যাং এখন এক আতঙ্কের নাম। তাদের বেপরোয়া উৎপাত সমাজে তৈরি করছে অস্থিরতা, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক। রাজধানীর উত্তরা এলাকায় আকস্মিকভাবে বেড়ে গেছে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন, যৌন নিপীড়নের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। অপরাধমূলক এসব কার্যকলাপে নাম আসছে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের।
সরেজমিনে উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায় যে, এখানে বিভিন্ন রাস্তায় বিশেষ করে ১২ নম্বর সড়কের খালি প্লটে কিম্বা চায়ের দোকানে অথবা কোনো বাড়ীর সামনে গোল করে ১০-১৫ জন ছেলে মোবাইল টিপতে থাকে এবং প্রকাশ্যে ধূমপান করতে থাকে। তারা এই সড়কে বিকাল থেকে রাত ১১টা অবধি অবস্থান করে।
১২ নম্বর সড়কের ৪৮ নম্বর বাড়ীর মালিক(নাম প্রকাশ না করার শর্তে) জানান, “ আমার বাড়ীর সামনে তারা দীর্ঘসময় অবস্থান করে এবং আমি বেশ কয়েকবার মানা করলে তারা ফোন দিয়ে আরো ৪০-৫০জন ছেলেপেলে নিয়ে আসে। আমার বাড়ী অবরুদ্ধ করে রাখে। আমার দাড়োয়ান তাদেরকে বাড়ীর সামনে জটলা এবং হই-হল্লোর করতে নিষেধ করলে তারা মারতে উদ্যত হয় ও বলে রাস্তা কি তোর বাপের?”
১২ নম্বর সড়কের আরেক বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন,” আমি ১৪ নং সেক্টরের এই রোডে ভাড়া বাসায় উঠেছি গত জানুয়ারী মাসে। কিন্তু বর্তমানে আমার প্রাইভেট পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। এখানে কিছু ছেলে-পেলে সম্ভবতঃ তারা নবম-দশম শ্রেণীতে পড়ে, সারাক্ষণ এই রোডে আড্ডা মারে; বেশ কয়েকবার আমার মেয়েকে ইভ-টিজিং করেছে, যখন ও রাতে একলা ভার্সিটি থেকে ফেরে। বর্তমানে আমি এখান থেকে বাসা পাল্টানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।“
আবার, একই রোডের ৪৯ নং বাড়ীর মালিক জানান বেশ কিছুদিন ধরে আমার বাড়ীর দারোয়ান না থাকায় ওই কিশোর-গ্যাং এর গ্রুপটা আমার বাড়ীর সামনে বিকট শব্দে বিকৃত আওয়াজ করতো, এমনকি তারা কয়েকজন মিলে গাঁজা সেবন করতো। তারপর আমি আরো কয়েকজন মিলে বাঁধা দিলে তারা পাশের খালি প্লট ৪৭-এ যেয়ে সন্ধ্যার পর নেশা করে এমন কি তাদের স্কুল ব্যাগে স্ল্যাশ হ্যামার ও ড্যাগার আমি আমার বাসার ছাদ থেকে দেখতে পেয়েছি। এই ব্যাপারে পুলিশ এর সাহায্য চেয়েও আমি ব্যর্থ হয়েছি।
আরেক ভুক্তভোগী বাড়ীওয়ালা সোহেল বলেন এই গ্যাং এর সাথে কদিন আগে ঘটে যাওয়া উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের কিশোরদের সাদৃশ্য পাওয়া যায় কারণ তারা প্রায়-ই মোটরসাইকেল নিয়ে আসে যা প্রচন্ড শব্দ করে চালায়। এবং কথায় কথায় ‘কোপানো’ শব্দটা ব্যাবহার করে থাকে। এই ব্যাপারে ১৪ নং সেক্টরের কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কিউ এম আজিজুল ইসলাম এর সাথে কথা বলে জানা যায় তার কাছে কোনো ভুক্তভোগী কমপ্লেইন দেন নাই। তিনি এই বিষয়ে বেশী কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
কিছু কিছু সেক্টরবাসীর মতে সরকার পরিবর্তন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উদাসীনতা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এইরকম অবস্থা চলতে থাকলে তা অন্তর্বর্তী সরকার এর সক্ষমতা নিয়ে ও প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে আসতে হবে ।